শীতের অসুখ বিসুখ

ঋতু পরিবর্তন প্রকৃতির একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। শীত মানেই যেন টাটকা সবজি, পিঠাপুলি, খেজুর রস আর নবান্নের ধুম। অন্যদিকে তেমনি শীতের সঙ্গে সঙ্গে এসে পড়ে কিছু অসুখ-বিসুখেরও নাম। এরকম কিছু অসুখ-বিসুখের কথাই আলোচনা করা যাক। 

ঠাণ্ডা লেগে সর্দিজ্বর 
এটা মূলত ভাইরাসজনিত অসুখ। প্রায় শ’খানেক ভাইরাস আছে যারা শীতে সর্দি জ্বরের প্রকোপ বাড়ায়। ঋতু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যখন গরমের পর শীত আসে, তখন আমাদের শরীর এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে গিয়ে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তখন কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। এই সুযোগটা কাজে লাগায় ভাইরাস। ফলে দেখা দেয় সর্দিজ্বর, নাক বন্ধ, গলা খুসখুস, হাঁচি-কাশি, গলা ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। 
এই সময়ে খুব সচেতন থাকা দরকার। ঠাণ্ডা যাতে না লাগে খুব খেয়াল রাখতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি সাবধান থাকতে হবে। সর্দি জ্বর হলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। ফলের রস, লেবুর রস খুব উপকারী। চিকেন স্যুপ ও ভিটামিন-সি জাতীয় খাবার ভালো পথ্য হিসেবে কাজ করে। 
নিউমোনিয়া 
বাচ্চা আর বয়স্ক-যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তারা বেশি আক্রান্ত হয়। ফ্লু’র জটিলতা হিসেবেও নিউমোনিয়া হতে পারে। মূলত বিশেষ কিছু ব্যাক্টেরিয়া আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাস এর জন্য দায়ী। জ্বরের মাত্রা থাকে খুব বেশি। কাশি হয়, শ্বাসকষ্টও হয়। নিউমোনিয়া থেকে মৃত্যুও হতে পারে। সময়মত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হতে পারে। 
অ্যাজমা 
শীতের শুরুতেই অ্যাজমা বা হাঁপানির প্রকোপ বাড়ে। ঋতু পরিবর্তনের ধাক্কা শরীরের ইমিউন সিসেল্টমকে উদ্দীপ্ট্ল করে। প্রতিকিদ্ধয়া হিসেবে তখন দেখা দেয় অ্যাজমা। যারা অ্যাজমার রোগী, শীতের শুরুতেই তারা সাবধান হয়ে যাবেন। ধুলোবালি, ঠাণ্ডা পানি এড়িয়ে চলবেন। ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। প্রয়োজনে ওষুধপত্র বা ইনহেলার ব্যবহার করতে হতে পারে। 
হৃদরোগ 
শীতে শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায়। ধমনির শিরাগুলো অপেক্ষাকৃত সরু হয়ে যায়। হূৎপিণ্ডেও একই অবস্ট'া। ফলে হূৎপিণ্ডের ধমনিগুলোতে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এ কারণেই দেখা যায় শীতে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা বেড়ে যায়। শীত এলে তাই হার্টের রোগীরা বাড়তি সচেতন থাকবেন। সকাল-বিকাল একটু দৌড়-ঝাঁপ করলে শরীর গরম থাকবে। গোসলের সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করবেন। 
ডায়রিয়া
বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানা বেশি লক্ষ করা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদি সংক্রমণের কারণে এর প্রাদুর্ভাব হয় বলে ধারণা করা হয়। তবে টাইফয়েড বা প্যারাটাইফয়েড, ব্যাকটেরিয়াজনিত ডায়রিয়া, পেটের পীড়া শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। সঠিক পরিমাণে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করলে ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে।
হাত-পা ফেটে যাওয়া  
অতিরিক্ত ধুলাবালি থেকে দূরে থাকতে হবে। পিওর ভ্যাজলিন, গ্লিসারিন ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকর।

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে, তাতে সাধারণ অসুখ থেকে নিজেদের নিজেরাই রক্ষা করা সম্ভব।  খাদ্য, নিয়মিত শরীরচর্চা, মানসিক কষ্ট লাঘব, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কাজেই সব দিক খেয়াল রেখে জীবন যাপন করলে আমরা ছোটখাটো অনেক অসুখবিসুখ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

Comments